Skip to toolbar
Categories

শ্রেষ্টতম সময়ের শুরু

জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাওয়া আমার আদরের ছোট বোনের উদ্দেশ্যে লেখা একটা খুব ব্যক্তিগত চিঠি

সেইদিন সকালটার কথা বলছি। যেইদিন ঘুম ভেঙে একটা অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে তোমার দিনের শুরু হবে। তুমি প্রবেশ করবে তোমার জীবনের শ্রেষ্টতম সময়ে। হ্যাঁ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন প্রতিটি মানুষের জন্যই শ্রেষ্টতম। হয়তো দিনের শুরু থেকেই তুমি অনুধাবন করতে পারবে না এটাই সেরা সময়। হয়তো আরো বছর তিন চারেক সময়ও যথেষ্ট নয় এটা বুঝতে। তবে একদিন তুমি অবশ্যই বুঝতে পারবে এটাই শ্রেষ্টতম। আমি চাই তুমি বুঝতে না পারলেও জেনে রাখো এই সময়ের ব্যাপারে। যাতে করে এটাকে আরো সুন্দর আনন্দময় এবং অসাধারন করে নিতে তোমার চেষ্টার কোনো কমতি না থাকে।

প্রত্যেকটা মানুষের জীবন একেবারেই আলাদা। সে যতই কাছের মানুষ হোক না কেন। ভাই হোক, বোন হোক, মা-বাবা কিংবা অন্য যেকোনো সম্পর্কেরই হোক না কেন। তাই প্রত্যককেই তার নিজের জীবনটাকে নিজের মতন করে শুরু করতে হয়। গোছাতে হয়। এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। কাছের মানুষরা শুধু তাদের সামর্থ্য মতন সাহায্য করতে পারে, উৎসাহ যোগাতে পারে। প্রত্যেকটা মানুষের অর্জন তাদের নিজেদের। এই সত্যটা উপলব্ধি করার সময় চলে এসেছে তোমার।


সতর্ক শুরু
শুরুটা নিয়ে একটু সতর্ক করতে চাই তোমাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুরুটা হয় একটু ভীতিকর। একাকিত্বের সাথে যুদ্ধ করে। হুট করে পরিবার বন্ধুবান্ধব ছেড়ে একেবারেই নতুন একটা পরিবেশে। নতুনত্বের উত্তেজনা কম, একাকিত্বের হাহাকারটাই বেশি। অপরিচিত অসংখ্য মুখের ভিড়ে নিজেকে খুজে পাওয়াটাই দায়। সব সময় তোমাকে আগলে রাখা পরিবারের অভাব বোধ হবে সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিটা মুহুর্তে। তবে সবচেয়ে ভাল কথাটা হচ্ছে, এই সময়টা খুব অল্প। তবে সেটা তোমাকেই নিশ্চিত করতে হবে।


দৈনন্দিন জীবন যাপন
একটা নতুন জায়গায় গিয়ে সবচেয়ে প্রথম যেই বিষয়টা নজরদারী করা দরকার সেটা হলো দৈনন্দিন জীবন যাপনের স্বাভাবিক গতিময়তা। এটা ঠিক ঠাক না চললে আর কোনো কিছুতেই মনোযোগ দেয়া সম্ভব না। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিদিনের যেই স্বাভাবিক নিয়মে তুমি চলে এসেছ এতদিন, তার চেয়ে যতটা কম ব্যতিক্রম করে এটা করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। হুট করে অনেক বেশি ব্যতিক্রম তোমার অজান্তেই তোমার মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করো তোমার থাকার জায়গা, ঘুমোনোর ব্যবস্থাটা, পড়ার টেবিল, বই গুছিয়ে রাখার তাক, এলার্ম ঘড়ি, তিন বেলা সময় মতন খাওয়া সহ আরো দৈনন্দিন নিজের প্রয়োজনীয় সকল কিছুর ব্যবস্থাটা ঠিক ঠাক করে রাখার। একটা কথা মনে রেখো, এসব কিছুই এতদিন তুমি যেভাবে করে এসেছ কিংবা পেয়ে এসেছ এতটা আরামদায়ক হবে না। তোমার দায়িত্ব হলো এটাকে কতটা নিজের জন্য স্বস্তিদায়ক আর গ্রহনযোগ্য করে তোলা যায় সেই চেষ্টাটা করা। প্রতিদিন এটাকে আরেকটু গোছানোর চেষ্টাটা যদি করতে থাকো তাহলে দেখবে এটা কখনোই অগোছালো হবে না। আর এটার সাথে সাথে এই অগোছালো কিন্ত নিজের দায়িত্বে গড়ে তোলা নিজের একার খুব ছোট্ট সংসারটার সাথে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতাটাও তৈরী করে ফেলো। এখান থেকেই তোমার বেড়ে উঠার প্রকৃত শুরু।


বন্ধু
তোমার দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন যখন ঠিক ঠাক শুরু হবে তখন তুমি প্রয়োজন অনুভব করবে সঠিক পথচলার সঙ্গী সাথীর। সঙ্গী সাথী কথাটাকে একথায় সুন্দর করে বললে বলতে হবে ‘বন্ধু’। নতুন একটা জায়গায় তুমি যাচ্ছ তোমার পরিবার এবং বন্ধু বান্ধবকে পেছনে ফেলে। খুব সহজ নয় কাজটা। এই টুকু বয়স পর্যন্ত যাদের উপরে চোখ বন্ধ করে নির্ভার হয়ে দিন কাটিয়েছ, হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করেছ, চরম কষ্টের মুহুর্তে যারা সব সময় তোমার পাশে ছিল, তাদের ছেড়ে যখন একটা নতুন সময়ের শুরু হতে যাচ্ছে, তখন সবচেয়ে বেশি জরুরী ঐ রকম নির্ভার না হলেও বিশ্বাস করার মতন কিছু মানুষের। যারা অন্তত তোমার খারাপ সময়ে তোমার পাশে থাকবে। ভালো সময়ে তোমার আসে পাশে মানুষের অভাব হবে না। তারাই প্রকৃত বন্ধু যারা খারাপ সময় সবার আগে তোমার পাশে এসে দাঁড়ায়। এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে ঠিক হবে কে কার বন্ধু হবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে বন্ধু নির্বাচনের কোনো ফর্মুলা নেই। কোনো নিয়মের ঘোরটোপে বন্ধুত্ব হয়না। এটা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অনেকটা ছোট বেলায় পড়া সেই প্যারাগ্রাফ “মানুষ সামাজিক জীব” এর মতন। তবে একটা কথা মনে রেখ, সাধারনত বন্ধুত্ব হয় একি ধরনের মানুষের মধ্যে। একি মন মানসিকতা, একি শখের, একি পছন্দের বিষয়ের মানুষের মধ্য। যেমন ধর একজন ঘরকুনো মানুষের সাথে এমন কারো বন্ধুত্ব সাধারন হয় না যে খুব ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। তাই তুমিও খুজে দেখো, এরকম কে কে আছে তোমার আসে পাশে, যে কিনা তোমার বেড়ে উঠা চিন্তা চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। তোমার পছন্দের সাথে তাদের পছন্দ খাপ খেয়ে যাবে। শুধু তোমার সুসময়ে নয়, কঠিন সময়ে তোমার পাশে থাকবে। যে তোমাকে দিক বিভ্রান্ত কম করবে, বরং যখন দরকার সঠিক নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করবে। যে তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না। এই টুকু পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছ কিভাবে এত কিছু বুঝবে একটা মানুষ সম্পর্কে? এটা মোটেও সহজ কাজ নয়। বরং খুব কঠিন কাজ। আমি তোমাকে বলবো তুমি মানুষগুলো সম্পর্কে যত বেশি জানা যায় সেই চেষ্টা করো। তাদের গল্প শোনো, ছেলে বেলার গল্প, বেড়ে উঠার গল্প। এই গল্প তোমাকে অনেক কিছু বলে দেবে। আর এই গল্পের সাথে তোমার জানা, শোনা দেখা কিংবা নিজের গল্পের সাথে যত বেশি মিল খুজে পাবে তত তোমার সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। একটা ছোট সতর্কতার কথা বলে রাখি। তাদের কাছ থেকে নিজেকে বাচিয়ে চলো, যারা বলার সময় একটা বলে আর বিশ্বাস করে ভিন্ন কিছু।

শহরটাকে জানো
দৈনন্দিন জীবন যাপন হলো, বন্ধুও হলো। এবার নতুন জায়গা সম্পর্কে ভালো ধারনা নেবার পালা। নতুন শহরের কোথায় কি আছে না আছে এই জ্ঞানটা খুব দরকার। তাই শহরটাকে ভালোভাবে চিনে নাও। হাসপাতাল কোথায়, বাজার কোথায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান পাঠ এসব তোমাকে জানিয়ে দেয়ার জন্য তোমার সিনিয়ররা মুখিয়ে আছে। তাদের কাছ থেকে খুব সহজেই জেনে নিতে পারো এসব। আর শহরের রাস্তা ঘাট ঠিক ঠাক ভালো ভাবে চিনে নেয়াটা তোমার দায়িত্ব। এটা বন্ধু বান্ধবের সাথে নিজেই চিনে নিতে পারো। এই শহরে একা একা চলা ফেরা করাটা যেন তোমার জন্য কখনো কঠিন না হয়। এটা নিশ্চিত করা তোমার নিজের জন্যই অনেক বেশি জরুরী।


পড়াশুনা
এতক্ষন যেসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি তার সব কিছুর মূল উদ্দেশ্যই হলো যাতে পড়াশুনায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। কারন এত সব কিছুর আসল কারনই এটা। প্রথম দিন থেকেই একটা বিষয় মাথায় রাখবে। যত যাই কিছু হোক না কেন, পড়াশুনায় যাতে কোনো রকমের ব্যাঘাত না ঘটে। আজ পর্যন্ত এত টুকু আসতে তোমার যেই পরিমান পরিশ্রম করতে হয়েছে সেটা মাথায় রাখবে। আর একি সাথে মনে রাখবে এত দিনের পড়াশুনার যদি একটা উদ্দেশ্য থাকে তাহলে এখনকার পড়াশুনার উদ্দেশ্য দুইটা। পরীক্ষায় ভালো করাটাই যেন তোমার পড়াশুনার একমাত্র উদ্দেশ্য না হয়ে যায়। এটা অবশ্যই খুব জরুরী। তবে এর পাশাপাশি তোমার অর্জিত জ্ঞানটাকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলাটাও খুব দরকার। যেই জ্ঞানটা তুমি অর্জন করছ, এর প্রাপ্তিটা কোথায়, এর ব্যবহারটা কোথায়, কিভাবে তুমি তোমার অর্জিত জ্ঞানের পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারবে। পড়াশুনা শেষে তোমার ক্যারিয়ারটাকে তুমি আসলে কিভাবে দেখতে চাও, তোমার জ্ঞানের সবচেয়ে ভালো কোন ব্যবহারটা তোমাকে তোমার লক্ষ্যে নিয়ে যাবে। ভালো করে ভেবে দেখ তোমার লক্ষ্যের সাথে কোনো ভাবে এমন কোনো কিছুকে যুক্ত করা যায় কিনা যেটা এই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। এই ভাবনাটাকে প্রতিদিন সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করো। আর প্রতিদিনের পড়াশুনাকে লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। এই চেষ্টার শুরুটা যাতে প্রথম দিন থেকেই হয়, আর শেষ দিন পর্যন্ত ধৈর্য্যটা ধরে রাখো।

অনুভূতি পোকা
এই পর্যন্ত এসে তুমি মোটামুটি তোমার নতুন জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শুরু করেছ। বন্ধু বান্ধব, আড্ডা ফুর্তি, ঘোরাঘুরি এবং সর্বোপরি পড়াশোনা। সব ঠিক ঠাক চলছে। এই রকম সময়ে কিংবা আরো কিছু দিন যাওয়ার পরে তুমি একটা নতুন বিষয়ের সন্ধান পাবে, যেটা হয়তো তোমার দিনের গতিকে ব্যাহত করবে। আটকে দেবে তোমার সময়ের অগ্রযাত্রাকে। একে আমরা নাম দিলাম “অনুভূতি পোকা”। এই অনুভূতি পোকা নানান ভাবে দেখা দেবে তোমার জীবনে। দেখা দেবেই এমন না। দিতেও পারে, আবার নাও পারে। একি রূপে বার বার দেখা দিতে পারে, আবার ভিন্ন ভিন্ন রূপেও দেখা দিতে পারে। এই সময়ের মধ্যে যাদের সাথে তোমার জীবনটা জড়িয়ে গেছে, যারা তোমার জীবনের একটা অংশে স্থান নিয়ে নিয়েছে, যারা তোমার বন্ধু, খুব কাছের মানুষ, এই পোকাটা সবচেয়ে তীব্রভাবে তাদের কাছ থেকেই আসবে। অনুভূতি পোকার অনেক রূপের মাঝে সবচেয়ে চিরায়ত রূপটির নাম অভিমান। ছোট খাট বিষয় নিয়ে অভিমান হবে, কাছের এই বন্ধুটি কেন এমন করলো। সেই অভিমান তাড়িয়ে বেড়াবে হয়তো কয়েকদিন, কিংবা অনেকদিন। হয়তো একদিন অভিমান চলে যাবে, তবে তার রেশ রয়ে যাবে আরো বহুদিন। এই অভিমান একে দেবে একটা সীমা রেখা, সম্পর্কের মাঝে। তবে তুমি যদি স্মার্ট হও, বাস্তববাদী হও, তাহলে খুব সহজেই কিন্ত এই অভিমানের উপসর্গগুলোকে আড়াল করে সহজ সমাধানের একটা না একটা রাস্তা বের করে নিয়ে আসতে পারবে। মনে রাখবে, সকল ঘটনার প্রভাব পর্যালোচনা করার সময় সব চেয়ে জরূরী বিষয়টা হলো “কি হলে সেটা সবার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে”। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেবার সময় একবার যদি নিজেকে এই প্রশ্ন করে সেটার উত্তরটা খুজে বের করার চেষ্টা করো, তাহলে ভুল সিদ্ধান্ত নেবার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস।

অনুভূতি পোকার আরেকটি রূপ হলো প্রেম, ভালোবাসা। খুব স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। এমন একটা বয়সের মধ্যে দিয়ে তুমি যাবে, যখন এই ধরনের অনুভূতি প্রবণতা খুব তীব্র থাকবে। এতদিন তুমি যেই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছ, সেখান থেকে এই নতুন জীবন অনেক বেশি আলাদা। এখানে তোমার জন্য থাকবে অবারিত স্বাধীনতা। ভালো মন্দ ঠিক করে দেয়ার কেউ নেই। সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমার নিজেকেই। হ্যা, বন্ধু বান্ধবরা থাকবে। তারা তাদের মতামত দেবে, তবে তুমি কি করবে শেষ পর্যন্ত সেটা তোমার নিজের বিবেচনা। এই রকম যখন অবস্থা, তখন প্রেম ভালোবাসার মতন কমপ্লিকেটেড বিষয় তুমি কিভাবে ডিল করবে? প্রথমে তুমি তোমার নিজের বিবেচনার প্রয়োগ করো। যেই সংস্কৃতিতে তুমি বড় হয়েছ, যেভাবে তোমার পরিবার চিন্তা ভাবনা করে, যেই বিচার বুদ্ধি এতদিনে তুমি অর্জন করেছ আশে পাশে দেখে। তারপর বন্ধু বান্ধবদের সাহায্য নাও। তাদের নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গী কি বলে সেটা দেখো। তারপর এমন একজন দায়িত্বশীল মানুষ খুজে বের করো, হতে পারে মা, বাবা, বড় ভাই, যে কেউ। পরামর্শ নিতে পারো। সবচেয়ে ভালো হয় এটা যতটুকু এড়িয়ে চলা যায়। কারন সবাই এই অনুভূতি পোকার আক্রমন থেকে বাকি জীবনকে বাচিয়ে রাখতে পারে না। এর প্রভাব পড়ে যায় পড়াশুনায়। এটা কিন্ত কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। শুধু মাত্র লক্ষ্যে অবিচল থেকেই বাকি সব কিছু জায়েজ করা যেতে পারে। নয়তো না। 🙂

অনুভূতি পোকার আরেকটি তীব্র রূপের নাম হতাশা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রায়শই এমনটা হয়ে থাকে। এই হতাশার মধ্যে প্রধানতম হচ্ছে পড়াশুনা সংক্রান্ত। অনেক পড়ছে, কিন্ত কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। না পড়াটা ঠিক ঠাক বুঝতে পারছে, না ফলাফল ভালো হচ্ছে। দিনের পর দিন এটা চেপে বসে মাথার উপরে। তৈরী করে হতাশার কালো পাহাড়। অনুভূতি পোকার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ সম্ভবত এটাই। একটা ব্ল্যাকহোল, এতে একবার পড়ে গেলে বেরিয়ে আশা খুব কঠিন। তাই খুব সতর্ক থাকতে হবে। এটা স্কুল কিংবা কলেজ লেভেল নয় যে প্রাইভেট টিউটর হাতে ধরে সব শিখিয়ে দেবে। এখানে সব কিছু নিজেকেই সমাধান করতে হবে। এই হতাশা থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখতে হবে। আর সেই জন্য পড়াশুনার ব্যাপারে শুধু আন্তরিকতাই যথেষ্ট নয়। হতে হবে স্মার্ট। প্রতিকূলতা জয় করার মানসিকতা। উদ্যমী হতে হবে, একটা কিছু না বুঝলে সেটা বুঝে নেয়ার জন্য সর্বোচ্চ কি কি করা যায় সেটা খুজে বের করতে হবে। খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেয়া মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া ভাগাভাগি করতে হবে। বন্ধুদের সাথে, সিনিয়রদের সাথে এমনকি শিক্ষকদের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি করা যেতে পারে। এসব ব্যাপারে কোনো রকমের সংকোচ থাকলে সেটা শুধু তোমাকেই পিছিয়ে দেবে, আর কাউকে নয়।

পড়াশুনার বাইরের দুনিয়া
পড়াশুনা আর জ্ঞানবিতরনের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অবদানটা হচ্ছে দেখার চোখ তৈরী করে দেয়া। দুনিয়ার ব্যপ্তিটাকে বাড়িয়ে তোলা। চিন্তার নতুন জগৎ উন্মোচন করা। এসব কিছুর পেছনে অনেক বড় অবদান হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন গুলোর। অনেক অনেক সংগঠনের সাথে পরিচয় হবে তোমার। অনেক অনুষ্ঠান, কার্যক্রমের সাক্ষী হবে তুমি। খুব ভালো করে ভেবে দেখো তোমার পছন্দের সাথে মিলে যায় এমন কোনো কার্যক্রম কি কোনো সংগঠন গুলো করছে কিনা। তুমি কি সেই সব কার্যক্রমের সাথে নিজেকে জড়াতে চাও? নাকি সেই কার্যক্রম উপভোগ করলেই তুমি খুশি? যদি দেখো আসলে কোনো সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে তুমি নিজেকে জড়াতে চাও না, তাহলে আমি বলবো অন্তত তুমি তোমার নিজের বিভাগের নিজস্ব সংগঠনের সাথে বিভিন্ন কার্যকলাপে যুক্ত থাকতে পারো। যেমন ধরো, সেমিনার, জব ফেয়ার ইত্যাদি। তবে মাথায় রেখো, কোনো কিছুতেই যুক্ত হবার মাত্রাটা যেন তত টুকুই হয় যাতে করে পড়াশুনায় কোনো ক্ষতি না হয়।

আবার পড়াশুনা
আবার পড়াশুনায় ফেরত যাই। আগে যেখানে শেষ করেছিলাম সেখান থেকেই শুরু করছি। পরীক্ষায় ভালো করার কোনো বিকল্প নেই। কারন ফলাফলটাই শেষ পর্যন্ত আমাদের সিস্টেমে প্রথম মাপকাঠি। আর গ্রেডিং সিস্টেমের এই যুগে একটা সেমিস্টারের খারাপ গ্রেডিং একেবারে ধসিয়ে দিতে পারে তোমাকে। বাকি পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কঠোর পরিশ্রমের পরেও সারাজীবন ঐ এক সেমিস্টারের দুঃখ তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াতে পারে। ধারাবাহিকতার কোনো বিকল্প নেই। এটা বুঝতে যদি একদিন তোমার দেরী হয় সেই একদিনেই পিছিয়ে পড়তে পারো। তাই তোমার রেজাল্টকেও তাড়া করো প্রতিদিন।

এবং ছুটি
প্রত্যাশিত অপ্রত্যাশিত অনেক ছুটি পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ছুটি আর জীবনেও পাবে না। কেন জীবনে এমন ছুটি পাবার আক্ষেপের কথা বলছি এটা আজ বুঝবে না। একদিন বুঝবে। সেইদিন তোমার আক্ষেপটা যেন আমার চেয়ে কম হয় সেই জন্যই এটা মনে করিয়ে দিচ্ছি। ঘুড়ে বেড়ানোর শখ থাকলে পুরোটাই উসুল করে নাও। কোনো নতুন কিছু শেখার শখ থাকলে সেগুলোকে এই ছুটি গুলোতেই দাও পূর্ণতা। যদি থাকে কোনো গাছে ফুল ফোটানোর শখ, কিংবা শখের শিক্ষক হয়ে বাড়ির ছোট কাজের মেয়েটাকে পড়াশুনা শেখানোর ইচ্ছা। যেমন ইচ্ছে গড়ে নেয়া তোমার অসাধারন সময়। এই সব কিছুর পরেও যদি দেখ রয়ে গেছে কিছু অলস সময়, শুয়ে বসে না কাটিয়ে এই সময়টা তুমি দিতে পারো তোমার পড়াশুনাকে একটা ভিন্ন মাত্রা। পুরো পৃথিবীতে তোমার বিষয়ে পড়াশুনাটা কোন দিকে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করে। তোমার পছন্দের টপিকের উপরে আরেকটু গবেষনাধর্মী পড়াশুনার করতে পারো। এছাড়া এসো নিজে করি টাইপ কিছু এক্সারসাইজ করতে পারো। নিজের বিষয়টাকে আরো ভালো করে জানার জন্য এটা খুব চমৎকার একটা সুযোগ এবং উপলক্ষ্য হতে পারে।

সবশেষে তোমাকে অভিনন্দন। একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো বিষয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে তোমার। সেই সুযোগটাকে সর্বোচ্চ ভালোভাবে লুফে নাও। উপভোগ করো।

No Comments

Post A Comment